Posted By : iftekhar May 29, 2019
আইপিও (IPO) কি?
আইপিও’র অর্থ ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং। যখন কোন কোম্পানী জনগনের কাছে মালিকানার অংশবিশেষ বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দেন তাকে আইপিও বলে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার জন্য আইপিও একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি। আমাদের দেশে সাধারণত উদ্যোক্তাগণ নিজেদের পুঁজি ও ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ব্যাংক লোনে না গিয়ে সাধারন জনগনের নিকট আংশিক মালিকানা বিক্রয় করেন। আমাদের দেশে ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স লিজিং কোম্পানির অধিকাংশই একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে পাবলিকের সঙ্গে নিদিষ্ট পরিমাণ মালিকানা ভাগাভাগি করে নিবেন এই শর্তে লিখিতভাবে অঙ্গিকার করে সরকার থেকে ব্যাংক অথবা বীমা লাইসেন্স পেয়েছেন। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইচ্ছুক জনসাধারণের কাছে শেয়ার বিক্রি করে তাকে আইপিও বলে। আইপিও’কে প্রাইমারি মার্কেট নামেও অভিহিত করা হয়। তুলনামুলকভাবে আমাদের দেশে আইপিও’তে ঝুঁকি কম। ২০১৪ সালে ১৭ টি, ২০১৫ সালে ১৭ টি এবং ২০১৬ সালে ৯ টি কোম্পানী আইপিওতে আসে। সব কয়টি আইপিও’তে কয়েকগুন বেশি আবেদন জমা পড়ে। ফলে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ নির্ধারন করতে হয়। যে সকল বিনিয়োগকারী আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ার পেয়েছেন তারা তাদের বিনিয়োগের উপর প্রচুর পরিমান লাভ করেছেন। ২০১৬ সালে আইপিওতে আসা কোম্পানীগুলোর আয়ের কিছু তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হলো।
IPO Status-2016 |
||||||
Approve & Lottery |
||||||
SL. No. |
Name Of Issue |
Issue |
Investment (TK) |
Lot Profit (TK) |
Pecentage (%) |
|
Price |
Lot |
|||||
1 |
2 |
3 |
4 |
5 |
6 |
7 |
1 |
Dragon Sweater |
10 |
500 |
5000 |
4400 |
88% |
2 |
Doreen Power |
29 |
200 |
5800 |
10940 |
188.63% |
3 |
ACME Laboratiries |
77 |
100 |
7700 |
4019 |
52.19% |
4 |
Evince Textiles |
10 |
500 |
5000 |
6750 |
135% |
5 |
Yeakin Polymer |
10 |
500 |
5000 |
10900 |
218% |
6 |
Fortune Shoes |
10 |
500 |
5000 |
25050 |
501% |
1 |
Pacific Denims |
10 |
500 |
5000 |
8500 |
170% |
2 |
Shepherd Industries |
10 |
500 |
5000 |
21550 |
431% |
উপরের কলাম নং-৬ এ প্রথম দিনের ক্লোজিং প্রাইস ধরে হিসাব করা হয়েছে। ৭ নং কলামে আয়ের হার দেওয়া হয়েছে। আইপিওতে বিনিয়োগকৃত টাকা মেক্সিমাম ৩ মাস বিনিয়োগ হয়। তাহলে ৩ মাসে লাভের হার কি পরিমান তা চিত্র থেকে দেখা যায়।
আইপিও’তে আবেদন করতে হলে বিও একাউন্ট আবশ্যক। একটি বিও’র বিপরিতে শুধুমাত্র একটি আবেদন করা যায়। একই ব্যাক্তি ভিন্ন ভিন্ন ডিপি’র মাধ্যমে আলাদা আলাদা বিও খুলে আবেদন করলে বিনিয়োগকৃত অর্থ বিএসইসি জব্দ করেন। চালাকি করলে ধরা পরলে শাস্তির পরিমান বেশি। অতিতে আমাদের দেশে ভুয়া বিও অ্যাকাউন্ট, একের অধিক আবেদন নিয়ে বেশ কয়েকটি জটিলতা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের নিজ স্বার্থে নিয়ম মেনে আইপিও’তে আবেদন করা উচিৎ। কোন কোম্পানী আইপিওতে আসতে চাইলে তাকে ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগ দিতে হবে। ইস্যু ম্যানেজারের প্রধান কাজ হলো আন্ডার রাইটার সংগ্রহ করা, বিএসইসি থেকে আইপিওতে আসার অনুমতি সংগ্রহ, প্রসপেক্টাস প্রকাশ করা, আবেদন পত্র যাচাই বাছাই করা, বরাদ্দপত্র ইস্যু করা, রিফান্ড ওয়ারেন্ট ইস্যু করা ইত্যাদি। ইস্যু ম্যানেজারগণ এসব কাজের জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানী থেকে কমিশন পান। যে কোন প্রতিষ্ঠান চাইলে ইস্যু ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতে পারে না। ইস্যু ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতে হলে বিএসইসি থেকে সনদ নিতে হয়। আইপিও’তে বিনিয়োগ করতে হলে যে কোন অথরাইজড ব্রোকার ফার্মের মাধ্যমে বি.ও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করতে চাইলে নির্ধারিত সময়ে ব্রোকার হাউজে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়।
আমাদের পুঁজিবাজারে আইপিও শেয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয়। চাহিদার তুলনায় শেয়ার সরবরাহ কম থাকার কারণে লটারির মাধ্যমে আইপিও বরাদ্ধ দেওয়া হয়। অতীত ও বর্তমানে আইপিও বিনিয়োগকারীরা প্রচুর লাভ করেছেন। বিনিয়োগকারীদের উচিৎ প্রত্যেক আবেদনে লেগে থাকা। আইপিওতে শেয়ারে বিনিয়োগ লাভজনক।
বিস্তারিত জানার জন্য বিএসইসি আইপিও ইস্যু রুল-২০১৫ দেখা যেতে পারে।
সূত্র- “সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ আইন ও বিধিবিধান”- পৃষ্টা নং-১৫২
আইপিও’তে আসার প্রক্রিয়া কী?
কি ধরনের কোম্পানী আইপিওতে আসতে পারবে সে ব্যাপারে বিএসইসি এর ইস্যু রুল-২০০৬ প্রকাশিত হয় এবং ২০১৫ সালে এটি সংশোধন করা হয়। এই নীতিমালাকে আইপিও ইস্যু রুল বলে। যে সকল কোম্পানীর মালিকের সংখ্যা ২৫০ জনের কম নয়, বিগত ৫ বৎসরের মধ্যে কমপক্ষে ৩ বৎসর লোকসান দেয়নি এবং পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটির কম নয় সেই সকল কোস্পানীর উদ্যোক্তা পরিচালক ইচ্ছে করলে আইপি’তে আসতে পারেন। তাকে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন নিতে হলে কোম্পানীকে বিশেষভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগ দিতে হবে। আইপিও রুলের শর্ত অনুসারে কমিশনের নিকট নিম্নে উল্লেখিত তথ্য দলিল দস্তাবেজ জমা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে খসরা প্রসপেক্টাস দিতে হবে। প্রসপেক্টাস যে শর্তে অনুমোদিত হবে ঠিক সেভাবে আইপিও ব্যবস্থাপনা করতে হবে। অনুমোদিত প্রসপেক্টাস বিনিয়োগকারীদের অবগতির জন্য জাতীয় দৈনিকে কমপক্ষে একটি ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। আইপিও’র শর্ত ভঙ্গ শাস্তি যোগ্য অপরাধ। বিএসইসি’র ২০১৫ সালের আইপিও ইস্যুর নিয়ম অনুসারে আগ্রহী কোম্পানীকে আইপিওতে আসার যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে হবে। আবেদনের সময় নি¤েœ উল্লেখিত তথ্য দিতে হবে।
১। কোম্পানীর ব্যবসায়ের ধরন ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
২। কোম্পানীর সম্পদের বিবরন, পরিমান ও মূল্য ।
৩। আইপিও থেকে প্রাপ্ত টাকা কি কি খাতে ব্যবহার করা হবে।
৪। কোম্পানীর পরিচালকদের নাম, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং তাদের পরিচালনাধীন কোম্পানীর নামের তালিকা।
৫। অডিটরস রিপোর্ট। এই অডিটর বিএসইসি এর প্যানেল ভূক্ত হতে হবে।
৬। বিগত ১ বৎসরের অডিটেড আর্থিক হিসাব নিকাশ। এটি ৬মাসের বেশি পুরনো হতে পারবেনা।
৭। ষ্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তির ঘোষনা।
৮। আইপিও রুলস ২০১৫ অনুসারে অনান্য আনুসাঙ্গিক হিসাব পত্র ও বিবরণী
৯। ক্রেডিট রেটিং রিপোর্ট।
আইপিও এর পদ্ধতি ২টি-একটি হলো ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি অন্যটি হলো বুক বিল্ডিং পদ্ধতি। যারা ফেইজ ভেলুতে আইপিও ছাড়বে তাদের জন্য ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি এবং যারা প্রিমিয়ামে আসতে চায় তাদের জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি থেকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সময় বেশি লাগে। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিও বন্টন নিম্নরুপ-
মিউচ্যুয়াল ফান্ড......................১০%
এনআরবি.............................১০%
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী..........৪০%
ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারী.......... ...২০%
সাধারণ বিনিয়োগকারী...............২০%
আইপিও এর জন্য ২০০ বা ৫০০ শেয়ার মিলে একটা লট করা হয়। এটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ।
প্রাক্তন সভাপতি(১৯৯৫)আইসিএমএবি
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ট্রেক নং-১০৬,
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ ট্রেক নং-০০৫,
লেখক: ” শেয়ার বাজার জিজ্ঞাসা”
2013 All right reserved Island Securities Limited