Posted By : iftekhar May 29, 2019
ব্রোকার হাউস-এর ব্যবস্থাপককে কী কী বিষয়ের প্রতি সজাগ থাকতে হবে?
আমাদের দেশের ব্রোকার হাউসগুলো খুবই ছোট। বেশির ভাগের ট্রেড ভলিয়্যুম কম। তাই তারা কম লোকবল দিয়ে কাজ চালাতে বাধ্য হন। ইদানিং কালে বিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের আইন, কানুন ও নিয়ম পালনের জন্য তদারকির মাত্রা যেভাবে বাড়িয়েছেন ব্রোকার হাউসগুলোকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইন কানুন ও নিয়ম নীতি পালন করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। নিম্নে বিশেষ বিশেষ বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
১. ব্রাঞ্চ খোলার জন্য বিএসইসি-এর অনুমতি নিতে হবে। অনুমতির জন্য বাড়িভাড়ার চুক্তি, টেলিফোন, ইলেকট্রিক লাইন-এর ডিমান্ড নোট, কমপক্ষে ৩ জন লাইসেন্স ধারী অথোরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভ, একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার, একজন ম্যানেজার, একজন হিসাবরক্ষক দেখিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ-এর প্রতিনিধি সরজমিনে তদন্তকালে কম্পিউটার, ইলেকট্রিক লাইন, ফ্যাক্স মেশিন, টেলিফোন ইত্যাদি খতিয়ে দেখবেন। স্টক এক্সচেঞ্জ তদন্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে পাঠান। ব্রোকার হাউসের কর্মকর্তাকে এসকল বিষয়ের প্রতি সজাগ থাকতে হবে।
২. স্টক এক্সচেঞ্জ-এর যে সকল সদস্য বিএসইসি থেকে স্টক ব্রোকার-এর লাইসেন্স পেয়েছেন তাদেরকে লাইসেন্সের শর্ত মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। ব্রোকার হাউসের কর্মকর্তাকে লাইসেন্সের শর্ত পরিপালন হচ্ছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৩. লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অথোরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভ ব্যতীত ট্রেডিং কার্যক্রম করা যাবে না। পর্যাপ্তসংখ্যক লাইসেন্সপ্রাপ্ত অথোরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভ-এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সময় সিডিবিএল-এর সকল নিয়ম কানুন মেনে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বিনিয়োগকারীর শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সনদপত্র গ্রহণ করেই অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এক ব্যক্তি শুধু একটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। দুই জনে তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।
৫. সিকিউরিটিজ বিক্রয়ের এর পূর্বে বিনিয়োগকারীর হিসাবে স্টক আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। ম্যাচিওর্ড হওয়ার পূর্বে শেয়ার বিক্রয় করা যাবে না।
৬. নিয়ম বর্হিভূতভাবে একজন বিনিয়োগকারীর সিকিউরিটিজ অন্য বিনিয়োগকারী হিসাবে স্থানান্তর করা যাবে না।
৭. বিনিয়োগকারী কর্তৃক সিকিউরিটিজ ক্রয় বিক্রয় করার পূর্বে লিখিত আদেশ থাকতে হবে। বিনিয়োগ আদেশের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।
৮. বিনিয়োগকারীর বিক্রয় আদেশের বিপরীতে অবশ্যই বিনিয়োগকারীর স্বাক্ষরিত সিডিবিএল কর্তৃক নির্ধারিত পে-ইন স্লিপ সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে হবে। বিক্রয় আদেশ পালন হলে সিডিবিএল থেকে শেয়ারটি স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ক্লিয়ারিং হাইজ-এ নেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীর স্বাক্ষরিত পে-ইন স্লিপ-এর বিপরীতে শেয়ার ট্রান্সফার করা যাবে।
৯. বিনিয়োগকারী কর্তৃক টেলিফোনে বিক্রয় বা ক্রয় আদেশ দিলে সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অথোরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভকে ক্রয় বিক্রয় আদেশে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে হবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত রেজিস্টার রাখতে হবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে রেজিস্টারে অথবা ট্রেড কনফারমেশন স্টেটমেন্ট-এ বিনিয়োগকারীর স্বাক্ষর নিতে হবে।
১০. এক বিনিয়োগকারীর হিসাব থেকে অন্য বিনিয়োগকারীর হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে না। তবে একই বিনিয়োগকারী কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন বিনিয়োগ হিসাবে অভ্যন্ত—রীণ অর্থ স্থানান্তর কেবল লিখিত আদেশের বিপরীতে করা যাবে।
১১. সকল বিনিয়োগকারীর অর্থ পাওয়া মাত্র নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা দিতে হবে। এই হিসাব থেকে সিকিউরিটিজ ক্রয় ও বিনিয়োগকারীকে পরিশোধ করা যাবে। একে কনসলিডেটেড কাস্টমার হিসাব বলা হয়। বিনিয়োগকারীর অর্থের অন্যত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
১২. ব্রোকার হাউজের আয় ও ব্যয়ের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব রাখতে হবে। ব্রোকার-এর কমিশনসহ সকল প্রকারের আয় ও ব্যয় এই হিসাব থেকে সম্পাদিত হবে।
১৩. কোনো বিনিয়োগকারীকে মার্জিন রুল ১৯৯৯ অনুযায়ী মার্জিন (লোন) সুবিধা দিতে চাইলে অবশ্যই বিনিয়োগকারীর সঙ্গে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প-এ মার্জিন চুক্তিনামা করিয়ে নিতে হবে। চুক্তিনামায় উল্লিখিত শর্তের শর্ত মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এই চুক্তি অনুসারে, প্রয়োজন দেখা দিলে ব্রোকার হাউস বিনিয়োগকারীর হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীর অর্ডার ছাড়া শেয়ার বিক্রয় করে দিয়ে ঋণ সমন্বয় করতে পারবেন। বিক্রয়ে লোকসান হলে তা পরিশোধ করতে বিনিয়োগকারী বাধ্য থাকবেন। মার্জিন চুক্তিনামার অন্যতম একটি নিয়ম হলো কোনো একজন বিনিয়োগকারীকে ব্রোকার হাউসের নীট ক্যাপিট্যাল-এর ২৫% এর বেশি লোন দেওয়া যাবে না। সময় সময় বিএসইসি কর্তৃক লোন এবং ইক্যুইটির হার মেনেই মার্জিন লোন দিতে হবে। লোন ও ইক্যুইটির হার বিএসইসি কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত হারের অধিক হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে টাকা জমা (মার্জিন কল) দেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীকে নির্দেশ দিতে হবে। সময়মতো নির্দেশ পালন না করলে ব্রোকার বিনিয়োগকারীর হিসাব থেকে সিকিউরিটিজ বিক্রয় করে ঋণের সমন্বয় করবেন।
১৪. বিনিয়োগকারীর হিসাবে জমা দেওয়া অর্থ বা শেয়ার বিক্রয়-এর ম্যাচিওর্ড অর্থ চাওয়া মাত্র পরিশোধ করতে হবে।
১৫. বিনিয়োগকারীর পক্ষে সিকিউরিটিজ ক্রয় হলে সিডিবিএল/স্টক এক্সচেঞ্জ-এর নিয়মমাফিক বিনিয়োগকারীর বিও এবং ব্যাক অফিস লেজারে জমা করা নিশ্চিত করতে হবে।
১৬. বিক্রয় আদেশ ব্যতীত কোন সিকিউরিটিজ ব্রোকার হাউস-এর জন্য নির্ধারিত ক্লিয়ারিং হাউস-এ রাখা যাবে না।
১৭. যে কোম্পানির যে দিন রেকর্ড ডেট দেওয়া হয় সেদিন সেই কোম্পানির কোনো শেয়ার যেন ক্লিয়ারিং হাউস-এ না থাকে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১৮. রেকর্ড ডেট ব্রোকার হাউস-এ থাকা নির্দিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার এবং ঐ শেয়ারের সকল বিনিয়োগকারীর হিসেবের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয়সাধনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বোনাস বা ডিভিডেন্ড জরিমানা হিসেবে ব্রোকার এর ঘাড়ে বর্তাবে।
১৯. প্রত্যেক ব্রোকারকে সব সময় নির্ধারিত নিট ক্যাপিট্যাল ঠিক আছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে নির্ধারিত ফরমেট এ স্টক এক্সচেঞ্জ-কে পূর্ববর্তী মাসের শেষ তারিখের নিট ক্যাপিট্যাল স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
২০. সদস্য কোম্পানির শাখা অফিস-এর কার্যক্রমের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। শাখা অফিসের কার্যক্রম এর বিবরণ সংক্ষিপ্তভাবে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলে জমা দিতে হবে। ডিএসইতে এই নিয়ম বলবৎ আছে।
২১. বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিএসইসি-এর সকল আইন কানুন যথাযথভাবে পরিপালন করতে হলে নির্ভরযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়ার প্রয়োজন। প্রত্যেক ব্রোকার হাউসকে দক্ষ জনবলসহ ব্যাক অফিস রাখতে হবে।
২২. মাঝারি সাইজের ব্রোকার হাউস-এ নিম্নে উল্লিখিত বিভাগে বিভাজন করে অফিস ব্যবস্থাপনা সাজাতে হবে :
(ক) ফ্রন্ট অফিস/কাষ্টমার কেয়ার; (খ) ট্রেড ডিপার্টমেন্ট;
(গ) আই টি ডিপার্টমেন্ট; (ঘ) অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট;
(ঙ) কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট; (চ) এইচ আর ডিপার্টমেন্ট;
(ছ) প্রশাসন; (জ) বাজার বিশ্লেষণ বিভাগ;
(ঝ) সিডিবিএল ডিপার্টমেন্ট; (ঞ) প্রকাশনা বিভাগ।
অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ মাথায় রেখে অফিস ব্যবস্থাপনা সাজাতে হবে। সুব্যবস্থাপনার সকল উপাদান এবং সংযোগ ঘটালেই কেবল ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
২৩. ব্রোকার হাউস-এর ডিলারশীপ থাকলে - অর্থাৎ নিজ কোম্পানির নামে লেনদেন করার অধিকার প্রাপ্তিকে নিজ হিসাবে ক্রয় করা শেয়ারের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। ক্লায়েন্ট-এর শেয়ার দিয়ে নিজের হিসাবে বিক্রয় করা যাবে না। তদ্রুপ ভাবে কেবলমাত্র কোম্পানির টাকায় শেয়ার ক্রয় করা যাবে।
২৪. বিএসইসি যখন যে আদেশ প্রদান করেন তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সঠিকভাবে পালন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
২৫. সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত যাবতীয় খবরা খবর বিনিয়োগকারীদের অবগতির জন্য নোটিশ বোর্ড-এ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে বিনিয়োগকারীগণ সকল খবরাখবর অবগত হওয়ার সুযোগ পায়।
২৬. উপরের বিষয়গুলি ছাড়াও নিম্নে উল্লিখিত তথ্য যেন পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা রাখতে হবে :
২৭. ব্রোকার প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভার কার্যপ্রণালি।
২৮. নিরীক্ষিত হিসাব।
২৯. ইনকাম ট্যাক্স ফাইল।
৩০. কাস্টমার কমপ্লেইন ফাইল।
ব্রোকার হাউসের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী তার নামমাত্র নমুনা উপরে তুলে ধরা হয়েছে। একে সম্পূর্ণ তালিকা বলে ধরে নেওয়া যাবে না।
প্রাক্তন সভাপতি(১৯৯৫)আইসিএমএবি
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ট্রেক নং-১০৬,
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ ট্রেক নং-০০৫,
লেখক: ” শেয়ার বাজার জিজ্ঞাসা”
2013 All right reserved Island Securities Limited