Posted By : iftekhar October 20, 2019
শেয়ারবাজারে ডিলিষ্ট কি এবং এটা কি পর্যায়ে আছে?
১৯৯৪ সাল থেকে এপর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করা হয় ৩৬ টি কোম্পানি। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের ১৩১ কোটি ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা আটকে আছে। দীর্ঘ ২১ বছর পেরুলেও আজ অবধি এ অর্থ ফেরত পাননি সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত ৩৬টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে-
(১) চাঁদটেক্সটাইল, (১৩) সোয়ানটেক্সটাইল, (২৫)প্যারাগনলেদার,
(২) চাঁদস্পিনিং, (১৪) পিপিআই, (২৬) রূপনঅয়েল,
(৩) ডেল্টাজুট, (১৫) মিলিনট্যানারি, (২৭) ন্যাশনালঅক্সিজেন,
(৪) গসিয়াজুট, (১৬) নিউঢাকামিলস, (২৮) এসটিএম,
(৫) প্যানথারস্টিল, (১৭) আহাদজুটমিল, (২৯) জেমনিটওয়ার,
(৬) আনোয়ারাজুট, (১৮) ইসলামজুটমিলস, (৩০) জেএইচকেমিক্যাল,
(৭) স্পেশালাইজডজুট, (১৯) হাইস্পিডসিপ, (৩১) মার্কবাংলাদেশ,
(৮) সমশেরজুট, (২০) মিউচ্যুয়ালজুট, (৩২) টেক্সপিইন্ডাস্ট্রিজ,
(৯) পেপারকনভারটিং, (২১) বেঙ্গলস্টিল, (৩৩) মেঘনাভেজিটেবল,
(১০) হাওলাদারপিভিসি, (২২) করিমপাইপ, (৩৪) ঈগলবক্স,
(১১) এ্যারোমাটি, (২৩) এবি বিস্কুট, (৩৫) রাবেয়াফ্লাওয়ার,
(১২) ফ্রগলেগস, (২৪) ঢাকাভেজিটেবল, (৩৬) ইএলকেমিকেল।
জানাগেছে, তালিকাচ্যুত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ডেনৎ ভেল্যু হিসেবেই ১৩১ কোটি ৩৬লাখ ৫৮হাজার ৫০০টাকা আটকে আছে বিনিয়োগকারীদের। প্রকৃতপক্ষে তালিকচ্যুতির সময় শেয়ারগুলোর দর আরো বেশি ছিল। তাছাড়া কোম্পানির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হিসেবে ধরলে আটকে পড়া বিনিয়োগের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে।
বিএসইসির সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা অর্থ উদ্ধারে কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। তাই বিনিয়োগকারী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে তারা বিনিয়োগ ফেরতের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাতে পারেননা। একারণে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এই টাকা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেনা বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি অবলুপ্ত হলে বিনিয়োগকারীদের দায়-দেনা মিটিয়ে দিতে পরিচালনা পর্ষদ বাধ্য থাকবে। বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। তবে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হলে সেই কোম্পানি যদি আইন অনুযায়ী অবলুপ্ত না হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ উদ্ধারে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেননা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের করার কিছুই থাকেনা। এমনকি কোম্পানির বিরুদ্ধেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননা। তবে কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো কোম্পানি অবলুপ্ত হলে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে প্রাপ্য অংশ বুঝে নেয়ার সুযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। তারা বলেন, তালিকাচ্যুতির আগে একটি কোম্পানি ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে থাকে। ওটিসি তে থাকা অবস্থায় কোম্পানির পরিস্থিতি খারাপ হলে সেটি অন্য কোনো ভালো কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা বা মালিকানা পরিবর্তন করেও সমস্যার উত্তরণ করা যেতে পারে। এজন্য ওটিসি মার্কেটকে আরো সক্রিয় ও কার্যকর করা সহ কোম্পানির অবলুপ্তির পদ্ধতি সহজ করা দরকার। যাতে কোনো তালিকাচ্যুৎ হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, কোম্পানি তালিকাভুক্তির সময় সঠিক ভাবে যাছাই-বাছাই না করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কোনো কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ফেরতের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তারা আরো বলেন, অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তারা ইচ্ছে করেও তালিকাচ্যুত হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। এধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণে বাইরের দেশে তালিকাচ্যুত হতে যাওয়া কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন বা ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন অথবা কোনো ভালো কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করার পদ্ধতি চালু রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই এবিষয়ের দিকে নজর দেয়া উচিত।
দৈনিক শেয়ার বিজ, ২৪ মে, ২০১৬
আমাদের দেশে আইন করে পরিচালকদের স্ব-ইচ্ছায় তালিকাচ্যুতির রু লস করা উচিৎ এবং সেই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত টাকা কিভাবে পরিশোধ করা হবে তার ব্যবস্থা রাখা উচিৎ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে এই ব্যবস্থা চালু আছে। কোন কোম্পানি ইচ্ছাকৃত ভাবে নন-ক¤প্লায়েন্স করে তালিকাচ্যুতির ক্ষেত্র তৈরি করছে কিনা সেই ব্যাপারে নজর দিতে হবে। এমন কি পত্র পত্রিকার মাধ্যমে কোম্পানির খবরাখবর প্রকাশ করতে হবে।
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, এফসিএমএ
প্রাক্তন সভাপতি(১৯৯৫)আইসিএমএবি
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ট্রেক নং-১০৬,
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ ট্রেক নং-০০৫,
লেখক: ” শেয়ার বাজার জিজ্ঞাসা”
2013 All right reserved Island Securities Limited